মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। মুসলমানদের ইবাদতের স্থান। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় জামায়াতের সাথে সালাত আদায় ও অন্যান্য ধর্মীয় ইবাদত করার জন্যই মুসল্লিরা মসজিদে যান। আর তাই আল্লাহর কাছে মসজিদ সর্বাপেক্ষা প্রিয় স্থান। কুরআনুল করিমে আল্লাহ বলেন- …. আর মসজিদগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ডেক না। তাই শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই মসজিদে গমন করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আল্লাহ পবিত্র তাই তার ইবাদতের ঘরটাও পবিত্র। আর তাই পবিত্র হয়েই মসজিদে প্রবেশ করার নিয়ম। এতে রয়েছে অপরিসীম ফজিলত। রাসুল (স) বলেছেন – যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পাক পবিত্র হয়ে অর্থাৎ ওযু করে কোনো ফরজ সালাত আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোনো ঘরে অর্থাৎ কোনো মসজিদে যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি পাপ ঝরে পড়ে এবং একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় । মসজিদে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করে যেতেও বারণ করেছেন নবি করিম (স)। তিনি বলেন – যখন তোমরা একামত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে। তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়ো করবে না। মসজিদে যাওয়ার জন্য মনস্থির করার পর মুসল্লীদের উচিত হবে তুলনামুলক পরিষ্কার ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা। কেননা এ ব্যাপারেও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন-হে আদম সন্তান প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। অর্থাৎ ময়লা কিংবা দৃষ্টিকটু যেনতেন কাপড় পরিধান করে মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন – তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়াবে সে যেন (সুন্দর) পোশাক পরিধান করে.।
অন্যদিকে মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ না করার ব্যাপারেও পরিষ্কার ঘোষণা আছে ইসলামে। বলা আছে -যে ব্যক্তি পিঁয়াজ , রসুন বা পিঁয়াজ জাতীয় সবজি খাবে সে যেন আমার মসজিদের কাছেও না আসে। তার মানে হলো মুখে দুর্গন্ধ হয় এমন খাবার যেমন পিঁয়াজ,রসুন, তামাক,মদ কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত কোনো ড্রিংকস ইত্যাদি খেয়ে মসজিদে যাওয়া উচিত নয়। এবার মসজিদে গিয়েই দুই রাকাত তাহিইয়াতুল মসজিদ নামাজ পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স)-এর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন- তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত সালাত আদায় করার পূর্বে বসবে না। তাছাড়া দুনিয়াবি কোনো কথা বলা, হারানো কোনো কিছুর খোঁজ করা, ব্যবসা ও চাকরি সংক্রান্ত কোনো আলোচনা করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। নবিজি বলেন – তোমরা মসজিদের ভিতরে কোনো লোককে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখলে বলবে আল্লাহ যেন তোমাদের ব্যবসায় কোনো লাভ প্রদান না করেন। আরও একটি ব্যাপার আছে। কোনো মুসল্লীর নামাজরত অবস্থায় অন্য কোনো মুসল্লীর সামনে দিয়ে যাওয়াটাও মারাত্মক অপরাধ বলে প্রিয় নবি (স) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন – যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে গমনকারী ব্যক্তির জানা থাকতো যে তার উপর কী পাপের বোঝা চেপেছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাকেও সে প্রাধান্য দিত।
এমনি করে আল্লাহ ও তার রাসূল মসজিদের সম্মান ও আদবের কথা বলেছেন। কিন্তু আজকাল আমরা মসজিদের আদব অনেকটা জেনে শুনেই নষ্ট করছি। ময়লা, ছবিযুক্ত, ছেঁড়া ও শর্ট কাপড় পরেই চলে আসি মসজিদে। মসজিদে বসেই আলোচনা করছি রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যবসায়িক আলোচনা। উচ্চৈস্বরে কথা বলা, শব্দ করে হাসা, মুসল্লীদের সামনে দিয়ে যাওয়া আসা, এমনকি মসজিদের ভিতরে মোবাইল রিসিভ করে কথা বলার মতো গর্হিত অপরাধও করছি আমরা অবলীলায়। আসুন আমরা আল্লাহর ঘর মসজিদকে আদবের সাথে ব্যবহার করি। মসজিদের সম্মানকে সুউচ্চে তুলে ধরি। লেখক : এইচ আর রাসেল
Leave a Reply