দেশের সংস্কৃতির আকাশ থেকে ঝরে পড়েছে একটি নক্ষত্র । সেই নক্ষত্রটির নাম মাসুম আজিজ। একজন স্বনামধন্য জাত অভিনয় শিল্পী হিসেবে মঞ্চ টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে ছিল তার তুমুল জনপ্রিয়তা। শুধু তাই নয় তিনি ছিলেন একজন দক্ষ চিত্রনাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা। ক্যান্সারের কাছে হার মেনে ১৭ অক্টোবর পরপারে পাড়ি দিলেন এই গুণী অভিনেতা।
মাসুম আজিজের জন্ম ও কর্মজীবন
অভিনেতা মাসুম আজিজ ১৯৫৩ সালের ২২ অক্টোবর হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আখতারুজ্জামান এবং মা সৈয়দা আজিজা সুলতানা। তরুণ বয়সে মাসুম আজিজ নিজেকে গানের মানুষ বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করতেন। বেশিরভাগ সময় গান নিয়ে থাকতেন। নিজে গাইতে পারতেন এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানোতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। তার অভিনয় জগতে আসার ঘটনাটি একটু ব্যতিক্রমই বলা চলে। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হল নাটক প্রতিযোগিতার নিয়মিত রিহার্সেল চলছিলো তখন। মাসুম আজিজ সেখানে বসে থাকতেন নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করার জন্য। কিন্তু একদিন নাটকের প্রধান অভিনেতা না আসায় আলাউল হলের প্রোভোস্ট শফিক হায়দার চৌধুরী মাসুম আজিজকে প্রক্সি দিতে বলেন। সেই শুরু। তারপর এ নাটকের প্রধান অভিনেতা কোনো কারণে নাটকটিতে অভিনয় করতে পারছেন না জানালে মাসুম আজিজই এই চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই কম্পিটিশনে তার অভিনিত নাটকটিই সেরা নাটক নির্বাচিত হয় এবং তিনি সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। তারপর থেকে নিয়মিত চট্টগ্রামের থিয়েটারে যাওয়া–আসা শুরু করেন মাসুম আজিজ। ঢাকায় এসে জীবিকার প্রয়োজনে তিনি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সাথে নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকেন নাটকপাড়ায়। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন। জীবদ্দশায় তিনি ৪০০টিরও অধিক নাটকে কাজ করেছেন। হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত নাটক ওড়ে যায় বক পক্ষীতে অভিনয় ছিল তার ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট। সালাউদ্দিন লাভলুর তিন গ্যাদা নাটক তাকে নিয়ে গেছে বাড়তি উচ্চতায়। তাছাড়া সাকিন সারিসুরি, দুই দুকুনে চার, জোছনা করেছো আড়িসহ অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি। বেশ কিছু মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন মাসুম আজিজ। এগুলোর মধ্যে ঘানি, গহীনে শব্দ, গেরিলা, লালচর, মমতাজ, বস্তির ছেলে কোটিপতি অন্যতম। ঘানি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ২০০৬ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
Leave a Reply